অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করতে কি কি লাগে?

বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে অনেক কাজই এখন অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব, যার মধ্যে অন্যতম হলো পাসপোর্টের আবেদন। অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করতে কি কি লাগে? ঘরে বসেই খুব সহজে অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করা যায়। অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করার প্রদ্ধতি খুবই সহজ এবং সময় সাশ্রয়ী। তাই, এই ব্লগ পোস্টে আমরা অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করার পদ্ধতি, কি কি ডকুমেন্টস লাগবে, পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করবো।

প্রথমেই জেনে নিব অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে? আজ আমাদের এই পোস্ট এ ফুল বিস্তারিত তুলে ধরবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক:

অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করতে কি কি লাগে?

আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদের মধ্যে যেকোনে একটা থাকলেই বাংলাদেশে পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে পাসপোর্ট করার জন্য শুধু এগুলোই যথেষ্ট নয়। আপনাকে আরো কিছু ‍ডুকোমেন্ট এর দরকার পড়বে নিচে এগুলো উল্লেখ করা হল:

  1. জাতীয়তা: জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ
  2. ঠিকানার প্রমাণপত্র: এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল,ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর যেকোনো একটি ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হবে।
  3. বাবা-মায়ের জাতিয়তা: আপনার বাবা মায়ের যে কোন একজনের জাতীয় পরিচয় পত্র কার্ড সাবমিট করতে হবে।
  4. পেশা: আপনি যদি সরকারি চাকরি জীবি হয়ে থাকেন তাহলে GO অথবা NOC ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে। এবং পেশাজীবী প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। তবে যদি আপনি অন্য কোন চাকরি কিংবা পড়াশেনা করে থাকেন তাহলে সেই ডুকোমেন্ট সাবমিট করতে হবে। যেমন: আপনার সার্টিফিকেট।
  5. প্রশংসা পএ: চোয়ারম্যান এর সার্টিফিকেট বা প্রশংসাপএ প্রদান করতে হবে।
  6. আবেদন ফি: পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করার চালান রশিদ।

পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে ২০২৪

পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে তা সাধারনত নির্ভর করে এর ধরন, মেয়াদ, পাতার সংখ্যা এবং জরুরি ভিত্তিতে ইস্যু করার প্রয়োজনীয়তার উপর। কারন পাসপোর্ট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। নিচে বাংলাদেশে পাসপোর্ট ফি-এর সাধারণ তালিকা দেওয়া হলো:

সাধারণ পাসপোর্ট (৫ বছর মেয়াদী):

এই পাসপোর্ট এর মেয়াদ ৫বছর হয়ে থাকে। এবং ৫বছর পর এটি পুনরায় রিনিউ করে মেয়াদ বাড়াতে হয়। একটি ৪৮ পাতার পাসপোর্ট ৫বছর মেয়াদী করতে কত টাকা খরচ হয় তার তালিকা নিচে দেয়া হল:

  1. ৪৮ পাতার পাসপোর্ট (সাধারণ): ৩,৪৫০ টাকা
  2. ৪৮ পাতার পাসপোর্ট (জরুরি): ৬,৯০০ টাকা
  3. ৪৮ পাতার পাসপোর্ট (সুপার জরুরি): ১০,৩৫০ টাকা

সাধারণ পাসপোর্ট (১০ বছর মেয়াদী):

এই পাসপোর্ট এর মেয়াদ ১০বছর হয়ে থাকে। এবং ১০বছর পর এটি পুনরায় রিনিউ করে মেয়াদ বাড়াতে যায়। একটি ৪৮ পাতার পাসপোর্ট ১০বছর মেয়াদী করতে কত টাকা খরচ হয় তার তালিকা নিচে দেয়া হল:

  1. ৪৮ পাতার পাসপোর্ট (সাধারণ): ৫,৭৫০ টাকা
  2. ৪৮ পাতার পাসপোর্ট (জরুরি): ১১,৫০০ টাকা
  3. ৪৮ পাতার পাসপোর্ট (সুপার জরুরি): ১৭,২৫০ টাকা

৭২ পাতার পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে:

  1. ৭২ পাতার পাসপোর্ট (সাধারণ): ৫,৭৫০ টাকা
  2. ৭২ পাতার পাসপোর্ট (জরুরি): ১১,৫০০ টাকা
  3. ৭২ পাতার পাসপোর্ট (সুপার জরুরি): ১৭,২৫০ টাকা

নোট:

  • জরুরি এবং অতি জরুরি পাসপোর্ট সাধারণত দ্রুত ইস্যু করা হয় এবং এর জন্য অতিরিক্ত ফি দিতে হয়।
  • পাসপোর্টে ফি বিভিন্ন সময়ে সরকারি সিদ্ধান্তর কারনে পরিবর্তন হতে পারে, তাই সর্বশেষ তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিস বা সরকারি ওয়েবসাইট চেক করুন।

অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করার নিয়ম

অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করার জন্য আপনাকে প্রথমে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (www.passport.gov.bd) এ যেতে হবে। তারপর “Continue To Online Enrollment বা Apply for Passport উক্ত বাটনে ক্লিক করতে হবে। ওখানে ক্লিক করার মাধ্যেমে আপনার সামনে একটি ফরম আসবে। ওই ফরমে আপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফরমটি পূরণ করতে হবে। যেমন:

  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম সনদপত্র
  • বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ (যেমন: বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল)
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি (সাম্প্রতিক তোলা, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড)

অবশ্যই ফরম পূরন করার পূর্বে আপনাকে ডকুমেন্টস স্ক্যান করে নিতে হবে যেন আপনি খুব সহজেই ফরমে আপলোড করতে পারেন।

পাসপোর্ট ফরম

যদি আপনার ফরম পূরন সম্পর্ন হয়ে যায় তহলে এবার পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করুন। বর্তমানে খুব সহজেই ঘরে বসেই পারপোর্ট ফি প্রদান করা যায়। এক্ষেত্রে আপনি (বিকাশ/নগদ) এর মত মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যাবহার করতে পারেন। অথবা ব্যাংকের মাধ্যেমে ফি পরিশোধ করতে পারেন।

এবার ফি পরিশোধ কম্পিলিট হয়ে গেলে ভালো ভাবো আবার একবার চেক করে নিন কোথাও ভুল আছে কিনা? যদি ভুল না থাকে তাহলে সাবমিট করার পরে আপনার আবেদন কৃত ফরমটি ডাউনলোড কিংবা প্রিন্ট করে নিন।

এরপর আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার আবেদন কৃত ফরম প্রিন্ট করে তাদের অফিসে জমা দিতে হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে তারা আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য (ছবি, আঙ্গুলের ছাপ) ইত্যাদি জমা নিবে। এবং আপনাকে একটা স্লিপ দিবে তারা পরবর্তীতে পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য ওই স্লিপ টি নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। এরপর ২০-২৫ দিন পর আপনি পাসপোর্ট চেক আনলাইন এখান থেকে আপনার পাসপোর্ট রেডি হয়েছে কিনা চেক করে দেখতে পারবেন।

পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে কোথায় যেতে হবে?

পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য আপনাকে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। সাধারনন প্রতিটি জেলাতেই একটি করে পাসপোর্ট অফিস রয়েছৈ। অবশ্যই ফিঙ্গার প্রদানের দিন পাসপোর্ট অফিস থেকে দোওয়া স্লিপটি সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। সেই সাথে আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদ সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।

পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কি করতে হবে?

পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আপনাকে পুরােনো মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টটি সঙ্গে নিতে হবে। সেই সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) একটি কপি ও মূল NID কার্ড দরকার হবে। পুনরায় আবার www.passport.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে নতুন করে ফরম পূরন করে ফি পরিশোধ করতে হবে।

এবং সেই আবেদন ফরম টি প্রিন্ট করে আপনি নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে। এরপর তারা আপনার আবেদন পত্র চেক করে আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য (ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ) ইত্যাদি সংগ্রহ করবে। এবং আপনাকে একটি স্লিপ দিবে পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য।

এরপর ২০-২৫ দিন পর আপনি পাসপোর্ট চেক আনলাইন এখান থেকে আপনার পাসপোর্ট রেডি হয়েছে কিনা চেক করে দেখতে পারবেন। রেডি হয়ে গেলে আপনার সেই নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *