বর্তমান সময়ে কর্মসংস্থানের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে ফ্রিল্যান্সিং। সেই সাথে ফ্রিল্যসিং মার্কেটপ্লেস হিসাবে এই দুনিয়ায় সবথেকে জনপ্রিয় প্লাটফর্ম হচ্ছে ফাইভার এবং আপওয়ার্ক। ফ্রিল্যান্সারদের কাছে দুটি প্লাটফর্মই বেশ গ্রহণযোগ্য। তবে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের একটা দ্বিধা সব সময়ই কাজ করে যে, আমার কোন প্লাটফর্ম থেকে কাজ শুরু করা উচিত। তাই আমাদের এই পোস্টে আমরা ফাইভার এবং আপওয়ার্কের কাজের ধরণ, পার্থক্য, আয়ের সুযোগ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত A 2 Z আলোচনা করব।
ফাইভার এবং আপওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে?
ফাইভার: ফাইভারে মার্কেটপ্লেসে আপনাকে একাউন্ট খুলে আপনি যে কাজে পারদর্শী সেই কাজের উপর গিগ সাজাতে হয়। এক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সারগণ গিগ পোস্ট করে থাকে আর বায়ার বা ক্লাইন্ট যাই বলে থাকি আমরা তারা আমদের গিগ দেখে যাকে তার কাছে গ্রহনযোগ্য মনে হয় তাকে নির্বাচন করে কাজ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও ফাইভারে বায়ার চাইলে জব পোস্টও করতে পারেন, যেখান থেকে ফ্রিল্যান্সাররা বিড করে কাজ নিতে পারবে।
আপওয়ার্ক: এখানে ফ্রিল্যান্সারা তাদের প্রোফাইলে নিজেদের কাজের অভিজ্ঞতা এসব তুলে ধরেন। এবং বায়ার যারা তারা এখানে তাদের কাজের চাহিদা অনুযায়ী জব পোস্ট করে থাকেন। যেহেতু বায়ার রা জব পোস্ট করে তাই প্রিল্যান্সারদের তাদের স্কিল অনুযায়ী সেসব জব পোস্টে বিড করতে বা প্রপোজাল পাঠাতে হয়। এ্যখানে বায়ার/ক্লাইন্ট বলতে যারা মূলতা ফ্রিল্যান্সারদের থেকে কাজটি করিয়ে নিয়ে থাকেন তাদের বুঝনো হয়। তখন সেই ক্লায়েন্টরা সব ফ্রিল্যান্সারদের প্রেপাজাল চেক করে যাকে উপযুক্ত মনে করেন তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। আবার ক্লায়েন্টরা চাইলে তাদের পছন্দের ফ্রিল্যান্সারকে কাজের জন্য ইনভাইটেশনও পাঠাতে পারেন।
মূল পার্থক্য
ফাইভার এবং আপওয়ার্কের মধ্যে মূল পার্থক্য যেখানে দেখা যায় তা হল কাজ পাওয়ার প্রক্রিয়া। ফাইভারে ফ্রিল্যান্সারা সেলার হিসেবে পরিচিত পান এবং ফ্রিল্যান্সারাই তাদের স্কিল অনুযাই যে কাজ করতে পারেন তা গিগের মাধ্যেমে বর্ননা করে থাকেন। সেখান থেকে গিগ দেখে বায়ার রা গিগ ক্রয় করে থাকে।
অন্যদিকে, আপওয়ার্কে ক্লাইন্টরা জব পোস্ট করেন এবং ফ্রিল্যান্সাররা প্রপোজাল পাঠিয়ে বিড করে থাকে। আর এক্ষেত্রে অনেক কম্পিটিশন ফেস করতে হয়।
কোথায় বেশি আয় করা যায়?
ফাইভার এবং আপওয়ার্ক দুই টাই বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। এখন কোনে সাইট থেকে বেশি আয় করা যায় এই প্রশ্ন করাতাই বোকামি। কেননা আয় নির্ভর করে একজন ফ্রিল্যান্সার এর নিজের দক্ষতার উপর। তবে ফাইবারে ছোট প্রোযেক্টের কাজ বেশি পাওয়া যায়। কারন ফ্রিল্যান্সারা অনেক সময় জানেন না যে কোন বায়ারের হাতে কত দিনের প্রেযেক্ট আছে। কতদিন চলবে। তাই ফ্রিল্যান্সাররা সল্প সময়ের কাজের জন্য গিগ পোস্ট করে থাকেন।
অন্যদিকে আপওয়ার্কে ক্লাইন্টরা সরাসরি জব পোস্ট করাতে তারা কতদিনের প্রোজেক্ট উল্লেখ করে দেন। তাই বলা যায় আপওয়ার্কে লম্বা সময়ের জন্য বড় বড় প্রোজেক্ট পাওয়া যায়।
কত % চার্জ কাটে?
ফাইভার: ফাইভারে ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লাইন্ট উভয়কেই চার্জ করে থাকে।এখানে ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের ২০% সার্ভিস ফি চার্জ হিসেবে কেটে নেওয়া হয়।
আপওয়ার্ক: এই সাইটে ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের ১০% সার্ভিস ফি চার্জ হিসেবে কেটে নেওয়া হয়। এছাড়া আপওয়ার্কে জবে বিড করার জন্য ফ্রিল্যান্সারদের কানেক্টস কিনতে হয়।
কোয়ালিটি কেমন?
ফাইভার এবং আপওয়ার্ক উভয় প্লাটফর্মেই প্রচুর দক্ষ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। ফাইভারে ক্লাইন্টরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সাদের গিগ দেখে খুজে নেন। আপওয়ার্কে ক্লাইন্টরা ফ্রিল্যান্সারদের প্রোফাইল দেখে তাদের ঘন্টামাফিক কত রেট, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিবেচনা করে কাজের জন্য নির্বাচন করেন।
রেটিং সিস্টেম
ফাইভার এবং আপওয়ার্ক উভয় মার্কেটপ্লেসেই রেটিং সিস্টেম রয়েছে। ফ্রিল্যান্সারদের কাজের উপর ডিপেন্ড করে ক্লাইন্টরা রেটিং দিয়ে থাকেন। একজন ফ্রিল্যান্সার যখন খুব ভালো ভাবে তার কাজটি সম্পর্ন করে ক্লাইন্টকে জমা দেন এবং ক্লাইন্ট সেই কাজ দেখে খুশি হন তাকে ৫স্টার রেটিং দিয়ে থাকেন। আর একজন ক্লাইন্টের কাজ থেকে ভাল রেটিং তাকে পরবর্তী কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সহযোগিতা করে।
পেইড মেম্বারশিপ বা বিশেষ একাউন্ট সুবিধা
পেইড মেম্বারশিপ মূলত যারা প্লাটফর্ম থেকে বাড়তি কিছু সুবিধা নিতে চান তাদের জন্য। তবে নতুন অবস্থায় এটা কোন ভাবেই নেয়া ইচিত নয়।
পেমেন্ট নেবো কীভাবে?
ফাইভার এবং আপওয়ার্ক উভয় প্লাটফর্ম থেকেই পেওনিয়ার কার্ড এবং ব্যাংক ট্র্যান্সফারের মাধ্যমে পেমেন্ট নেওয়া যায়।
পর্যবেক্ষণ এবং বিরোধ নিষ্পত্তি
ফাইভারে প্রথমে ফ্রিল্যান্সার এবং গ্রাহক নিজেদের মধ্যে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেন। আপওয়ার্কে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চমৎকার ব্যবস্থা আছে এবং কনট্রাক্ট হোল্ডে রাখা যায়।
উপসংহার:
এটি ছিল ফাইভার এবং আপওয়ার্কের একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ। আপনি যদি নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার ক্যারিয়ার শুরু করতে চান তবে এই তথ্যগুলো আপনার জন্য সহায়ক হবে। সর্বশেষ তথ্য অফিসিয়াল সাইটে পাবেন।