AI যেসব পেশা একেবারেই উধাও করে দিবে! এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এখন শুধু আর ভবিষ্যত প্রযুক্তির কোন অংশ নয়, বরং এটি এখন মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ হয়ে উঠেছে। আর এ পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যান। সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন সফরে তিনি এমন কিছু বক্তব্য দিয়েছেন, যা শুধু প্রযুক্তি প্রেমীদের নয়, চাকরিপ্রত্যাশী ও চাকরিজীবী সহ অনেকের মাঝেও এক ভয়ানক ঝড় তুলে দিয়েছে। তিনি বলেছেন এমন অনেক পেশা আছে যা এআই(AI) প্রযুক্তির কারনে পুরোপুরি উধাও হতে যেতে পারে। অগাস্টেই আসছে GPT-5? নতুন মডেল চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে ওপেনএআই?
অল্টম্যান আরো বলেন, “ভবিষ্যতে অনেক পেশা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।” তিনি জানান, গ্রাহকসেবা বা কাস্টমার সার্ভিস এমন একটি ক্ষেত্র, যা প্রায় সম্পূর্ণভাবে AI দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়ার খুব কাছাকাছি রয়েছে।
আল্টম্যান বলেন, “যখন আপনি কাস্টমার সাপোর্টে কল করেন, তখন হয়ত আপনি বুঝতেই পারছেন না যে মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন নাকি একটি সুপার-স্মার্ট এআইয়ের সঙ্গেই কথা বলছেন।” আরোও জানান, এই এআই কখনো ভুল করে না, কোনো ফোন ট্রি বা রিডাইরেকশন নেই—শুধু দ্রুত ও নিখুঁত সেবা।
অল্টম্যান আরও বলেন, “চ্যাটজিপিটি এখন অনেক ক্ষেত্রেই মানব চিকিৎসকদের চেয়ে ভালো রোগ নির্ণয় করতে পারে।” যদিও তিনি এখনো পুরোপুরি এআই নির্ভর চিকিৎসা সেবা চালু করার পক্ষে নন, তবুও রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে AI যে একটি বড় বিপ্লব আনছে তা তিনি স্পষ্ট করেছেন।
হারিয়ে যেতে পারে যেসব পেশা
স্যাম অল্টম্যানের মন্তব্য এবং সাম্প্রতিক এআই প্রযুক্তির অগ্রগতির উপর ভিত্তি করে নিচে কিছু পেশা তুলে ধরা হলো, যেগুলো অনেক ঝুঁকির মুখে রয়েছে:
- কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধি
- ডেটা এন্ট্রি অপারেটর
- টেলিমার্কেটার
- বেসিক অ্যাকাউন্টিং ও বুককিপিং জবস
- সাধারণ কনটেন্ট রাইটিং
- ট্রান্সক্রিপশনিস্ট
- বেসিক আইটি সাপোর্ট
এসব পেশা মূলত নিয়মিত, পুনরাবৃত্তিমূলক এবং গাইডলাইনভিত্তিক কাজের মধ্যে পড়ে। কারন প্রতিদিন একই কাজ কোম্পানির রুলস অনুযায়ী একজন চাকরিজীবি করে থাকেন। তাই যেসব কাজে বিশ্লেষণ, আবেগ বা জটিল চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন খুব বেশি পড়ে না, সেগুলোই প্রথমেই AI দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।
তবে এত্ত কিছুর মধ্যেও যেসব পেশা নিরাপদ থাকবে!
তবে সব পেশাই হারিয়ে যাচ্ছে না। কিছু পেশা এমন আছে যেগুলোর জন্য এখনও মানুষের দক্ষতা, আবেগ ও বিচারবুদ্ধির প্রয়োজন অপরিহার্য। যেমন:
- চিকিৎসক ও সার্জন (বিশেষ করে সার্জিকাল কাজ)
- মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও থেরাপিস্ট
- শিক্ষক (বিশেষ করে ছোটদের জন্য)
- সাংবাদিক ও ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার
- ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার ও আর্টিস্ট
- ইঞ্জিনিয়ারিং ও হাই-লেভেল গবেষণা ভিত্তিক পেশা
- নীতিনির্ধারক ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক
প্রযুক্তি যেমন বিপদ, তেমনি সম্ভাবনা
স্যাম অল্টম্যান ওয়াশিংটনে বলেন, “এআই এর ভয়াবহ রূপ নিয়ে আমি মাঝেমধ্যে রাতে ঘুমাতে পারি না। এমন এক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করি, যেখানে শত্রু রাষ্ট্রগুলো AI কে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর আক্রমণ চালাতে পারে।”
তিনি ভয়েস ক্লোনিং প্রযুক্তিকে একদিকে প্রশংসা করলেও একই সঙ্গে এর প্রতি আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। কারণ অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখনো কণ্ঠস্বরকেই পরিচয়ের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে এটি ভয়াবহ প্রতারণার পথ খুলে দিতে পারে।
রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে AI
গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অল্টম্যানের এই সফর এমন এক সময় হয়েছে যখন ট্রাম্প প্রশাসন ‘AI Action Plan’ চালু করেছে। এই প্ল্যানের লক্ষ্য—চীনের সঙ্গে প্রযুক্তিগত দৌড়ে এগিয়ে থাকা, আরও বেশি ডেটাসেন্টার স্থাপন এবং কিছু নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা।
এই পরিপ্রেক্ষিতে, অল্টম্যান ২০২৫ সালের মধ্যে ওপেনএআই-এর একটি অফিস ওয়াশিংটনে চালু করার ঘোষণাও দিয়েছেন। কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিয়ে এবং সিনেট কমিটির মুখোমুখি হয়ে তিনি এখন ওয়াশিংটনে একজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠেছেন।
শেষ কথা
এআই যে ভবিষ্যতের পৃথিবী একদমই পাল্টে দেবে, তা আজ আর কল্পনা নয়। ওপেনএআই প্রধান অল্টম্যানের বক্তব্য আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—এই নতুন প্রযুক্তির বিপদও আছে, আবার অসীম সম্ভাবনাও আছে।
যারা এখন থেকেই নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে এআই প্রযুক্তি ব্যাবহার করছে, তাদের জন্য এআই হতে পারে এক আশীর্বাদ। আর যারা শুধু একই ধরনের কাজ করে যান্ত্রিক হয়ে পড়েছে, তাদের জন্য সময় এসেছে নতুন করে ভাবার। চাকরি থাকবে কি না—তা নির্ভর করবে আপনি কতটা মানুষের মতো কাজ করতে পারেন, অথচ মেশিনের জায়গায় দাঁড়িয়ে।